প্রকাশিত: Sat, Mar 23, 2024 12:06 PM
আপডেট: Sat, Apr 27, 2024 3:52 PM

লোক-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে আমার ২১ দফা

আর রাজী, ফেসবুক: বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নানান সময় নানান কথা হয়। নানান জন নানান দাবি করেন। আমিও এই দফায় ২১ দফা কথা কইয়া রাখতে চাই। দফাগুলান হইলো: 

১. সকল লোক-বিশ্ববিদ্যালয়ে অবিলম্বে স্বায়ত্তশাসন কার্যকর করতে হবে। 

২. সকল লোক-বিশ্ববিদ্যালয়ে অবিলম্বে সিনেট মনোনীত প্যানেল থেকে সর্বোচ ভোট প্রাপ্তকে উপাচার্য এবং ক্রমান্বয়ে দ্বিতীয়, তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্তকে সহ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগে দিতে হবে, কোনো অবস্থাতেই আর কোনো প্রক্রিয়ায় উপাচার্য বা সহ-উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া চলবে না।

৩. কোনো অবস্থাতেই নির্বাচিত উপাচার্য বা সহ-উপচার্যদের সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যর অনুমোদন ছাড়া অপসারণ করা চলবে না।

৪. কোনো অবস্থাতেই ভিসি-প্রোভিসি বাদে প্রশাসনিক অন্য কোনো পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ করা চলবে না। রেজিস্ট্রার, কন্ট্রোলার, কম্পট্রোলারসহ সকল প্রশাসনিক পদে কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের নিয়োগ বাধ্যতামূলক হতে হবে। 

৫. অবিলম্বে ছাত্রসংসদগুলো কার্যকর করতে হবে এবং ছাত্রসংসদগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সকল কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। হলের প্রাধ্যক্ষ, আবাসিক শিক্ষকদের হল সংসদের কাছে জবাবদিহিতা বাধ্যতামূলক করতে হবে। হলের দায়িত্ব পালন সকল শিক্ষকের জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে। অবশ্যই নিয়মিত ছাত্ররা কোনো না কোনো আবাসিক শিক্ষকের সরাসরি তত্ত্বাবধানে থাকবেন। অর্থাৎ কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি ২০ হাজার নিয়মিত শিক্ষার্থী এবং এক হাজার শিক্ষক থাকেন তাহলে অবশ্যই প্রতি বিশজন শিক্ষার্থী সরাসরি একজন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে থাকবেন। এই শিক্ষার্থীদের সকল রকম শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য দেখভাল করবেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষক। (এই দায়িত্ব বিদ্যমান অধ্যাদেশে নানানভাবে উল্লেখ রয়েছে, কেবল যথাযথ রীতি-পদ্ধতি বা বিধি তৈরি করে তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।)

৬. ন্যূনতম ব্যতিক্রম রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্তির ন্যূনতম যোগ্যতা পিএইচডি ডিগ্রি হতে হবে। প্রচুর সংখ্যক ছাত্রছাত্রী দেশে-বিদেশে পিএইচডি ডিগ্রি করেছেন বা করার পর্যায়ে রয়েছেন, তাদের নিয়োগ প্রাপ্তি সহজ করতে হবে। রাষ্ট্রের টাকা ব্যয় করে, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পিএইচডি করতে পাঠানোর সুযোগ যথা শিঘ্রি বন্ধ করে দিতে হবে।

৭. যে যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স-পিএইচডি করেছেন তার সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নিয়োগপ্রাপ্তি বন্ধ করে দিতে হবে। প্রত্যেক শিক্ষককে তার নিজের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতিরেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত তিন বছর সেবাদান বাধ্যতামূলক করতে হবে।

৮. বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবল বাংলাদেশিদের নিয়োগের আইন বদলে সব দেশের নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। নিয়োগপ্রাপ্তির জন্য অবশ্যই  বাংলাভাষায় পাঠদানের দক্ষতা থাকতে হবে। বিদেশী (নিয়োগপ্রাপ্ত) শিক্ষক বাংলায় পাঠদানে অক্ষম হলে তাদের জন্য দোভাষীর ব্যবস্থা করতে হবে।

৯. বিশ্ববিদ্যালয়ে আপগ্রেডেশান ও/বা পদোন্নতি প্রথা বাতিল করে সকল পদে যথাযথ বিজ্ঞাপন দিয়ে নতুন (ফ্রেস) নিয়োগ দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরিকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত  হিসেবে গণ্য করা চলবে না।

১০. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা যুক্তিসঙ্গত ও যথাযথ কর?তে হবে। 

১১. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত কোনো কাজ, যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান, পরীক্ষাসংক্রান্ত কাজ, শিক্ষার্থীদের দেখভাল ইত্যাদির জন্য আর্থিক বা অন্য কোনো বিশেষ সুবিধা রাখা চলবে না। সকল শিক্ষককে সমানভাবে সকল দায় ও দায়িত্ব পালন করতে হবে। 

১২. সকল শিক্ষকের আবাসিক সুবিধা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিশ্চিত করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই শিক্ষকদের ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে শিক্ষকতা করার অনুমতি দেওয়া চলবে না।

১৩. শিক্ষকদের প্রতিটি পদে নিয়োগপ্রাপ্তির জন্য অবশ্যই বাংলা ভাষায় প্রকাশনা বা বাংলা-অনুবাদ প্রকাশনা থাকতে হবে। 

১৪. বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিচিং ও রিসার্চ- দুই শাখায় পৃথকভাবে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। 

১৫. শিক্ষকদের নিয়োগ টিচিং শাখার হলে বর্তমান/সাবেক শিক্ষার্থীদের মূল্যয়ন নথি এবং গবেষণা শাখার শিক্ষক হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের গবেষণার আন্তর্জাতিক মান মূল্যায়ন বিবেচনা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

১৬. বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা শাখা চালু রাখার জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে রাষ্ট্রের প্রয়োজন বিবেচনায় রেখে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় উপযুক্ত গবেষণা প্রস্তাব (পর্যালোচনামূলক, তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক) দিতে পারবে তাদের গবেষণা পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রকে যুক্তিসঙ্গত বরাদ্দ দিতে হবে। গবেষণা প্রস্তাব মূল্যায়ন ও সমন্বয়ে জাতীয়/কেন্দ্রীয় পর্যায়ের স্বাধীন কমিটি করতে হবে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি কার্যকর ও যুক্তিসঙ্গত গবেষণা পরিচালনা করতে না পারে তবে তাদের গবেষণা তহবিল বরাদ্দ পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যাবে। 

১৭. বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সম্মান শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা করতে হবে। সারা দেশে একই সাথে ভর্তিপরীক্ষা অনুষ্ঠান করতে হবে (চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়গুলোর প্রায় অনুরূপ)। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে নির্দিষ্ট নাম্বারধারী যে কেউ এই পরীক্ষায় যতবার ইচ্ছা অংশ নিতে পারবেন এবং উত্তীর্ণ হলে মেধাক্রম অনুসারে কেবল সে বছরই তাদের পছন্দ মাফিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন। 

১৮. আবাসিক হিসেবে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের বাসস্থান, আহার, খেলাধূলা, বিনোদন এবং সকলের জন্য যথাযথ সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ এবং পাঠদান উপযোগী অবকাঠামোর ব্যবস্থা না করে বিভাগ খোলা ও শিক্ষার্থী ভর্তি নিষিদ্ধ করতে হবে। 

১৯.  লোক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব রকম ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে। ‘অভ্যন্তরীণ আয়’ যদি কিছু হয় বা থাকে তাতে ছাত্রসংসদের শতকরা একশভাগ কর্তৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেবল ব্যয় অনুমোদনের প্রক্রিয়া ও ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিরীক্ষণ করবে এবং বাৎসরিক প্রতিবেদন প্রকাশ-প্রচার করবে।

২০. অবিলম্বে একটি জাতীয় কমিশন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষকদের মধ্যে যারা টিচিং শাখায় থাকতে চান তাদের পাঠদান সক্ষমতা এবং যারা গবেষণা শাখায় থাকতে চান তাদের গবেষণা সক্ষমতার মান যাচাই করে অযথার্থদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দিয়ে দিতে হবে।

২১. বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে উত্থাপিত সব রকম অভিযোগ তদন্তে অবশ্যই নির্বাচিত ছাত্রপ্রতিনিধি এবং সিনেট মনোনিত নাগরিক প্রতিনিধিকে সংযুক্ত করার বিধি তৈরি করতে হবে।

আর রাজী: শিক্ষক, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়; ফেসবুক: যঃঃঢ়ং://িি.িভধপবনড়ড়শ.পড়স/ধৎৎধলর